ল্যাপটপ এখন আর শুধু বিলাসিতা নয়, জীবনের দরকারি সঙ্গী — হোক তা অনলাইন ক্লাস, অফিসের কাজ, ভিডিও এডিটিং, বা গেম খেলা। কিন্তু প্রথমবার ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে অনেকেই এমন কিছু ভুল করে ফেলেন, যেটা পরে আফসোসের কারণ হয়। তাই আজকের এই লেখায় থাকছে এমন ৭টি সাধারণ ল্যাপটপ কেনার ভুল ২০২৫ সালে এসে যা আপনি একেবারেই করবেন না।
এই গাইডে ৭টি ল্যাপটপ কেনার ভুল ২০২৫, নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১। বাজেট নির্ধারণ না করা
অনেকেই আগে থেকেই বাজেট নির্ধারণ না করে দোকানে চলে যান বা অনলাইন সার্চ করেন। এতে করে হয় বাজেটের বাইরে চলে যান, নয়তো কম দামে খারাপ কনফিগারেশন নিয়ে ফেলেন।
তাহলে সঠিক সিধান্ত কোনটি?
প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কত টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন (যেমনঃ ৩০,০০০–৪০,০০০ টাকায় স্টুডেন্ট ল্যাপটপ, ৫০,০০০–৭০,০০০ টাকায় অফিস বা মিড-লেভেল ল্যাপটপ ইত্যাদি)।
২। নিজের প্রয়োজন না বুঝে কেনা
সবার প্রয়োজন এক না আর সেটাই স্বাভাবিক। স্টুডেন্টদের যা দরকার, একজন ভিডিও এডিটরের প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক আলাদা বা একজন শুধু ডেইলি লাইফ ইউজের জন্য ল্যাপটপ নিতে চান।
সঠিক সিধান্ত হতে পারে, একজন স্টুডেন্টের ক্ষেত্রে – মেটাল বডি, ৮GB RAM, SSD যুক্ত ল্যাপটপ
বা অফিসের কাজে ব্যাবহারের জন্য যেটা মাথায় রাখা দরকার– Battery Backup, Keyboard Quality আর সেই সাথে সময় উপযোগী স্পেসিফিকেশন।
গ্রাফিক্স/ভিডিও এডিটিং এর জন্য– Dedicated GPU, High-end বা মিড লেভেলের প্রসেসর।
আর আপনি যদি গেমার হন তাহলে আপনার জন্য– High refresh rate display, Cooling system আর High end Processor সেই সাথে বাজেটের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।
ভুল ৩: RAM ও Storage নিয়েই শুধু ভাবা
অনেকে মনে করেন বেশি RAM থাকলেই ল্যাপটপ ভালো। অথচ প্রসেসর, ডিসপ্লে কোয়ালিটি, ব্যাটারি, এমনকি বিল্ড কোয়ালিটিও গুরুত্বপূর্ণ। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ধরুন আপনার কাছে অনেক বই আছে যেটা(Storage) আর বড় টেবিল (RAM) থাকলেও, আপনি নিজেই (CPU) হিসেবে যদি ধীরে কাজ করেন, তাহলেতো আর কাজ দ্রুত হবে না তাইনা। আর এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে এই ২০২৫ সালে এসে
Proccessor নুন্যতম Intel Core i5 বা Ryzen 5 এর নিচে না নামা
SSD (অন্তত ২৫৬ GB) থাকা
Full HD (1920×1080) ডিসপ্লে নির্বাচন করা
ভুল ৪: HDD-ভিত্তিক ল্যাপটপ কেনা
অনেকেই বাজেটের কথা ভেবে এখনো HDD (Hard Disk Drive) যুক্ত ল্যাপটপ কিনে থাকেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসেও HDD-ভিত্তিক ল্যাপটপ কেনা ঠিক যেনো রিকশা দিয়ে হাইওয়েতে ওঠার মতো! সময় বদলেছে, প্রযুক্তিও বদলেছে — এখন ল্যাপটপে SSD (Solid State Drive) ছাড়া আর চলেই না।
HDD বনাম SSD: পার্থক্যটা কোথায়?
HDD: ধীর গতির, ঘূর্ণনভিত্তিক পুরনো প্রযুক্তি
SSD: দ্রুত, নিরব, কম শক্তি ব্যবহারকারী আধুনিক স্টোরেজ
যা লক্ষ্য করবেন:
HDD-যুক্ত ল্যাপটপ চালু হতে সময় নেয় ১-২ মিনিট, আর SSD ল্যাপটপ ১০–১৫ সেকেন্ডেই রেডি! সফটওয়্যার ওপেন করতে, ফাইল কপি করতে, এমনকি ব্রাউজ করতেও SSD তফাৎ গড়ে দেয়,ব্যাটারিও বেশি সময় ধরে চলে।
বাজেট কম হলেও চেষ্টা করুন:
অন্তত ২৫৬GB SSD যেন থাকে
অনেকে Hybrid (SSD + HDD) অফার করে — তবে শুধু SSD থাকলে ভালো
আপনি যেটা অবশ্যই করবেন
– SSD থাকলে OS ও অ্যাপ দ্রুত চলে
– NVMe SSD হলে আরও ভালো
ভুল ৫: অতিরিক্ত ফিচারের মোহে পড়ে যাওয়া
অনেক সময় টাচস্ক্রিন, RGB কিবোর্ড বা ২-in-১ কনভার্টিবল ল্যাপটপ দেখে আগ্রহ বাড়ে, কিন্তু আপনার দরকার না হলে তা টাকা নষ্ট।
সঠিক সিদ্ধান্ত হলোঃ
শুধু দরকারি ফিচার থাকলেই যথেষ্ট। বাহারি ফিচার সবসময় কাজে লাগে না।
ভুল ৬: কনফিগারেশন না বুঝেই কেনা
প্রসেসর, RAM ও SSD না বুঝে কিনলে ঠকতে পারেন!
ল্যাপটপের পারফরম্যান্স মূলত তিনটি জিনিসের উপর নির্ভর করে:
প্রসেসর (CPU), RAM, এবং স্টোরেজ (SSD বা HDD)। এখন এগুলোর কিছু টেকনিক্যাল দিক না বোঝার কারণে অনেকেই পুরনো বা ধীরগতির সিস্টেম কিনে ফেলেন। নিচে প্রতিটির টেকনিক্যাল দিক ব্যাখ্যা করা হলো:
১. প্রসেসর (Processor)
জেনারেশন গুরুত্বপূর্ণ: শুধু “Core i5” লেখা থাকলেই চলবে না—i5-7th Gen আর i5-12th Gen এর মধ্যে পারফরম্যান্সে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
আপনার টার্গেট: Intel ১২তম Gen বা তার উপরের কিছু (যেমন i5-1235U) অথবা AMD Ryzen ৫ম/৬ষ্ঠ জেনারেশন (যেমন Ryzen 5 5625U)।
২. RAM (মেমোরি)
টাইপ: বর্তমানে DDR5 RAM সবচেয়ে আপডেটেড ও দ্রুতগতির। DDR4-ও চলে, তবে DDR5 ভবিষ্যতের জন্য সব থেকে ভালো পছন্দ।
ব্যান্ডউইথ ও ফ্রিকোয়েন্সি: DDR5-এর ক্লক স্পিড সাধারণত 4800 MHz বা তার বেশি, যেখানে DDR4 হয় 2666 MHz বা 3200 MHz। বেশি স্পিড = দ্রুততর কাজ।
মিনিমাম: ৮ জিবি, তবে ভারী কাজের জন্য ১৬ জিবি ভালো।
৩. স্টোরেজ (SSD)
SATA SSD বনাম NVMe SSD: SATA SSD আগের প্রযুক্তি, গতি সীমিত (~500MB/s)।
NVMe SSD অনেক দ্রুত (~3000MB/s পর্যন্ত)। এর ফলে ল্যাপটপ বুট হয় কয়েক সেকেন্ডে, এবং অ্যাপস অনেক দ্রুত লোড হয়।
তাই আমার পরামর্শ হলো, দাম কম দেখে পুরনো কনফিগারেশন কিনে ফেললে আপনি প্রযুক্তিগতভাবে অনেক পিছিয়ে যাবেন। তাই কেনার আগে স্পেসিফিকেশন ভালোভাবে যাচাই করুন — শুধু মডেল নয়, কোন জেনারেশন, কোন টাইপ, কোন স্পিড তা খেয়াল রাখুন।
ভুল ৭: সঠিক দোকান/সাইট থেকে না কেনা
অনেক সময় লোকাল দোকান বা অনির্ভরযোগ্য অনলাইন সাইট থেকে ল্যাপটপ কেনার পর দেখা যায় কোনো ওয়ারেন্টি নেই, বা খারাপ প্রোডাক্ট দেওয়া হয়েছে।
সঠিক কাজ কী?
– Authorised Dealer বা ব্র্যান্ড শপ থেকে কিনুন
– বিক্রয় পরবর্তী সেবা যাচাই করে নিন
– অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে মডেল নাম চেক করুন
শেষ কথা (Conclusion):
ল্যাপটপ কেনা একটা বিনিয়োগ। তাই হুটহাট সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নিজের প্রয়োজন ও বাজেট বুঝে, তথ্য জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। উপরোক্ত ৭টি ভুল থেকে আপনি সাবধান থাকলে নিশ্চিতভাবেই একটি ভালো ল্যাপটপ কিনতে পারবেন আশা করা যায়।
আপনার পালা:
আপনার বাজেট বা ব্যবহার কেমন? নিচে কমেন্ট করুন, TechJonaki আপনার সাথেই আছে।
বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, তাদেরও হয়তো কাজে লাগতে পারে
ভালো লাগলো আপনার আর্টিকেল টি কারন আপনি যে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন সেই বিষয় গুলো জানা থাকলে সঠিক সিধান্ত নিতে সহায়ক হবে।